ছাত্রদলের সমাবেশে সাংবাদিকদের হেনস্তা, গালিগালাজ ও মারধরের হুমকি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এলাকায় আয়োজিত ছাত্রদলের বিক্ষোভ সমাবেশে হেনস্তার শিকার হয়েছেন দুই সাংবাদিক। ঢাবি শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার ঘটনায় নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান এবং প্রক্টর অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে এই বিক্ষোভ সমাবেশরে আয়োজন করে ছাত্রদল। সেখানে ওই দুই সাংবাদিককে গালিগালাজ ও মারধরের হুমকি দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ ওঠে।
বুধবার (১৪ মে) দুপুর ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশে ছাত্রদলের নেতাদের বক্তব্য দেওয়ার সময় এই ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী দুই সাংবাদিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সদস্য।
তারা উভয়ই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী। প্রথমজন আফজাল হোসেন তানভীর বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার ঢাবি প্রতিনিধি। অপরজন মানজুর হোসাইন মাহি কালের কণ্ঠ পত্রিকার ঢাবি প্রতিনিধি।
জানা যায়, ঘটনাস্থলে সংবাদ কাভার করার জন্য গিয়ে প্রথম ভুক্তভোগী সাংবাদিক তানভীর তার এক বন্ধুর সঙ্গে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ঘটনা নিয়ে কথা বলছিলেন।
এসময় পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মো. রফিকউল্লাহ এসে ঐ সাংবাদিককে বলেন, তুই এভিডেন্স ছাড়া উল্টাপাল্টা কথা বলতেছছ কেন? কে তুই? তোরে থাপ্পর দিবো! এখান থেকে এখনই চলে যা। এই কথা বলে সাংবাদিকের দিকে তেড়ে আসেন তিনি।
বাগবিতণ্ডার এক পর্যায়ে অভিযুক্তের পরিচয় জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, আমি ছাত্রদলের নেতা। তুই কে? এরপর সাংবাদিক পরিচয় দিলে তিনি বলেন, সাংবাদিক হইছছ তো কী হইছে?
এরপর আবার তার নাম জিজ্ঞাসা করা হলে তার আশপাশের ছাত্রদলের অন্যান্য নেতাকর্মীরা তাকে সরিয়ে অন্য জায়গায় নিয়ে যান।
এ সময় ঘটনাস্থলে থাকা অন্য ভুক্তভোগী সাংবাদিক মানজুর মাহি বাগবিতণ্ডা দেখতে পেয়ে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া ঐ ছাত্রদলের নেতাকে থামাতে গেলে দ্বিতীয় ভুক্তভোগী সাংবাদিককে থামিয়ে কী হয়েছে কী হয়েছে বলে জিজ্ঞেস করেন ঢাবি শাখা ছাত্রদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ আবু সাইদ।
এ সময় তাকে ঘটনাটি বললে তিনি ঐ সাংবাদিককে বলেন, আপনি কে? আপনার পরিচয় কী?। ঐ সাংবাদিক যখন তাকে পরিচয় দিয়ে ঘটনাটি জানান তখন তিনি তাকে বলেন, সাংবাদিক হইলে কী হইছে?
এ সময় ভুক্তভোগী দ্বিতীয় সাংবাদিককে তিনি ধাক্কা দেন। এসময় পাশে থাকা অন্য সাংবাদিকরাও এই ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে থাকলে তাদেরকে উদ্দেশ্য করে গালি দেন মোহাম্মদ আবু সাইদ।
অভিযুক্ত রফিকউল্লাহর কাছে অভিযোগের সত্যতা জানতে চাইলে রফিকউল্লাহ বলেন, ঐ সাংবাদিককে আমি চিনতাম না। ওনার গায়ে সাংবাদিকের কোনো পরিচিতি কার্ড ছিল না। আমি মনে করেছি উনি ছাত্রদলেরই কোনো এক ছোট ভাই। এ কারণে কথা কাটাকাটির মধ্যে আমি কিছুটা উত্তেজিত হয়ে যাই। কিন্তু যখন জানতে পারি উনি সাংবাদিক তখন আমি ঐ জায়গা থেকে সরে আসি।
অভিযুক্ত আবু সাইদ বলেন, আমি পাশেই নাস্তা করছিলাম। রফিকউল্লাহ নামে একজনের সঙ্গে সাংবাদিকদের ঝামেলা হলে আমি এগিয়ে যাই। আমি জানতাম না যে ওনারা সাংবাদিক। আমি মারামারির কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে যাইনি। আমি শুধু হাত প্রসারিত করে তাদের আটকানোর চেষ্টা করছিলাম। আর তখন যদি আমি গালি দিয়েও থাকি আমি শিউর না।
এ বিষয়ে জানতে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সেক্রেটারি নাসির উদ্দীন নাসিরকে কয়েকবার ফোন দেওয়া হলেও তার সাড়া পাওয়া যায়নি।
এদিকে, বহিরাগত দুর্বৃত্তদের হাতে ঢাবি ছাত্র নিহতের প্রতিবাদ মিছিলে বহিরাগতের অংশগ্রহণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।
এ নিয়ে, বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী রিপন মিয়া ফেসবুকে লিখেছেন, যে বহিরাগতদের হাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী প্রাণ হারালেন, সেই বহিরাগতকেই আবার এই প্রাঙ্গণে নিয়ে আসা হলো কেন? আপনারা বুঝতে পারেননি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্নিহিত স্পন্দন। এই ক্যাম্পাসের হৃদয়ের স্ফুলিঙ্গকে ধরতে আপনাদের ব্যর্থতা পরিষ্কার।
এফএআর/এএমএ

See also  Pregnant Woman Dies After suspected Blood Transfusion mix-up at SMS Hospital
Total
0
Share
Need Help?