৯ দফার লেখক নিয়ে বিভ্রান্তি, যা বললেন সমন্বয়করা

সম্প্রতি প্রকাশ্যে এসেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখা শিবিরের সভাপতি। প্রকাশ্যে রাজনীতিতে শিবিরের আসার পর থেকেই নানান মহলে কোটাবিরোধী আন্দোলন তথা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নিয়ে চলছে গুঞ্জন। নয় দফা, সমন্বয়কদের নিরাপদ আশ্রয় কিংবা একদফা। সবকিছু নিয়েই বিভিন্ন দাবি উঠছে ছাত্র সংগঠনগুলো থেকে। ছাত্রদল বলছে, আন্দোলনে তাদের শহীদের সংখ্যা শতাধিক। নয় দফাকে একদফায় নিয়ে যাওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা ছিল তাদের। অন্যদিকে শিবিরের পক্ষ থেকে অফিসিয়ালি কোনো দাবি না করা হলেও তাদের কর্মীরা শিবির সভাপতিকে নয় দফার লেখক হিসেবে প্রচার করতে দেখা গেছে।
তাই স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে, ৯ দফার লেখক আসলে কে? এ বিষয়ে আন্দোলনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ও কেন্দ্রীয় সমন্বয়করা কী বলছেন, জানার চেষ্টা করেছে জাগো নিউজ। নয় দফা নিয়ে জানতে চাইলে সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, যখন নয় দফা ঘোষণা হয় তখন ইন্টারনেট সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল। আমি নিজেও গোয়েন্দা সংস্থার কাছে আটক ছিলাম। এ কারণে পুরো বিষয়টা নিয়ে আমিও সম্পূর্ণভাবে ক্লিয়ার না। তবে যতটুকু শুনেছি, জেনেছি, সেটা হলো নয় দফা মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে আব্দুল কাদেরই সব জায়গায় পাঠিয়েছেন।
হাসনাত বলেন, নয় দফার কারিগর কে বা কে লিখেছে সেটা আব্দুল কাদেরই একমাত্র বলতে পারবে। তবে আমি মনে করি না, অন্য কেউ লিখলেও আব্দুল কাদেরের অবদান তাতে গৌণ হয়ে যায়। আমরা নয় দফার প্রবর্তক হিসেবে আব্দুল কাদেরকেই জানি।
৬ জন গুরুত্বপূর্ণ সমন্বয়ক যখন ডিবির হেফাজতে, তখন হাতেগোনা তিন-চারজন সমন্বয়ক কর্মসূচি ঘোষণা, দিকনির্দেশনা প্রদানসহ সমগ্র আন্দোলন পরিচালনা করেছিলেন। জাগো নিউজ কথা বলার চেষ্টা করেছে তাদের সঙ্গে। তাদের অন্যতম হলেন আব্দুল হান্নান মাসউদ।
তিনি নয় দফার ব্যাপারে বলেন, বন্দুকের নলের মুখে দাঁড়িয়ে, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে, যে ৯ দফার ঘোষণা দিয়েছে, সেই ৯ দফার ঘোষক। এর বাইরে ৯ দফার আর কোনো মাস্টারমাইন্ড নাই। এই আন্দোলন ব্যর্থ হলে সেই ঘোষকই ফাঁসির দড়িতে ঝুলতো। আজ যারা ক্রেডিট দাবি করছে, তারা সেদিন কোথায় ছিল? এমনকি সমন্বয়ক লিস্টেও তাদের কারো নাম নাই।
মাসুদ আরও বলেন, ৯ দফার আইডিয়াগুলো আলাদা আলাদাভাবে অনেকের মাথায় এসেছিল। সেসবের যথেষ্ট প্রমাণ আছে। কিন্তু সামনে এসে যে জাতির নেতৃত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিল, সেই লিডার। ৯ দফার লিডার আব্দুল কাদের, অন্য কেউ নয়।

See also  2 Doctors dead, 4 injured as Car crashes into culvert in MP

আরও পড়ুন
সাদিক কায়েমকে নিয়ে এত আলোচনা কেন? 

সেই সময়ের আরেক আন্দোলন পরিচালনাকারী সমন্বয়ক মাহিন সরকার। তিনি বলেন, ৯ দফা লিখেছে আব্দুল কাদের। আব্দুল কাদেরই এটা লিখেছে এবং সাংবাদিকসহ বিভিন্ন জায়গায় ক্ষুদেবার্তার মাধ্যমে পাঠিয়েছে। এখন যদি কোনো সংগঠন এসে দাবি করে এটা তারা লিখেছে, সেটা হবে মিথ্যা দাবি।
তিনি বলেন, আন্দোলনের সব রাজনৈতিক দলেরই একটা স্টেক ছিল। সবাই সমানভাবে লড়াই করেছে এটা সত্য কথা। কিন্তু এককভাবে কেউ এসে দাবি করলেই সেটা তার হয়ে যাবে না। ৯ দফা আব্দুল কাদেরই লিখেছে এবং সেই সবার কাছে পৌঁছিয়েছে।
ছাত্র সংগঠনগুলোর আন্দোলনে ক্রেডিট নেওয়ার বিষয়ে ঢাবি ছাত্রদলের সভাপতি গণেশচন্দ্র রায় সাহস বলেন, আন্দোলনের স্ট্র্যাটেজির কারণে শুরুর দিকে আমরা সিনিয়র নেতৃত্ব সামনে যাইনি। জুনিয়র কর্মীরা সামনে থেকেছে। মিরপুরের মেট্রোরেল স্টেশন পোড়ানোর মামলায় আমি ও আমার সাধারন সম্পাদককে মূল পরিকল্পনাকারী ও অর্থের যোগানদাতা হিসেবে মামলা দিয়েছে। আন্দোলনের মাঝামাঝি আমরা সরাসরি যুক্ত হয়েছি। আমি নিজেই ছররা গুলিতে বিদ্ধ হয়েছি। কিন্তু আমি মনে করি, এটা সবার আন্দোলন। তাই এককভাবে কারও ক্রেডিট নেওয়ার কিছু নেই।
৯ দফার ব্যাপারে সদ্য প্রকাশ্যে আসা শিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সভাপতি আবু সাদিক মোহাম্মদ কাইয়ুম (সাদিক কায়েম) এখনই কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, আমরা সাংগঠনিকভাবে খুব দ্রুতই এ বিষয়ে আমাদের অবস্থান পরিষ্কার করবো।
তবে যাকে কেন্দ্র করে এত আলোচনা, সেই আব্দুল কাদের সব নিয়ে জানিয়েছেন বিস্তারিত। রোববার রাতে ফেসবুকে ৯ দফা ও আন্দোলনের সেই সময়ের বিষয়গুলো পরিষ্কার করেছেন তিনি।
স্ট্যাটাসটির বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন এখানে। 
তিনি লিখেছেন, শিবিরের (ঢাবি শাখা) সেক্রেটারি আমাকে আবারও ফোন দিলো। বলতেছে, ‘কিছু দাবি দাওয়া খসড়া আকারে করছি, তোমার সঙ্গে আলোচনা করি।’ আমাদেরও যেহেতু আগেই আলোচনা হয়েছিল অনেকগুলো দাবির ব্যাপারে সেগুলো তখন উনার সঙ্গে আলোচনা করে সমন্বিতভাবে তৈরি হয় ৯ দফা। তিনি একে একে কিছু দাবি বললেন। যেগুলা খুব কমন দাবি দাওয়া। যেমন: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ, ছাত্র হত্যার সঙ্গে জড়িত পুলিশ প্রশাসনকে বরখাস্ত, সন্ত্রাসীদের বিচারের আওতায় আনা, ভিসির পদত্যাগ। যেগুলো ৬ জন শহীদ হওয়ার পরে মঙ্গলবার রাতের বৈঠকের আলোচনাতেই আমরা ভেবেছিলাম। এছাড়া মানুষজনও সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন কিছু দাবিদাওয়া জানিয়ে আসছিল।
এমএইচএ/এমএইচআর/জিকেএস

Total
0
Share
Need Help?