বাংলাদেশে জলবায়ু ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠায় দুই শতাধিক তরুণের ১৪ দাবি

বাংলাদেশে জলবায়ু ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠায় দুই শতাধিক তরুণের ১৪ দাবি

বাংলাদেশে জলবায়ু ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠায় দুই শতাধিক তরুণের ১৪ দাবি

বাংলাদেশে জলবায়ু ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠায় ১৪ দাবি উত্থাপন করেছেন দেশের দুই শতাধিক তরুণ জলবায়ু আন্দোলনকারী। জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় তৃণমূল থেকে তরুণদের কণ্ঠস্বর জোরদার এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নীতিনির্ধারণীতে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিতের মধ্য দিয়ে জলবায়ুর ন্যায়বিচার নিশ্চিতে এসব দাবি উত্থাপন করা হয়।
বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর আলোকি কনভেনশন সেন্টারে অ্যাকশন-এইড বাংলাদেশ এবং ব্রাইটার্স ইয়ুথ সোসাইটির যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত তিন দিনব্যাপী বাংলাদেশ ইয়ুথ কপ ২০২৪ সম্মেলনের সমাপনী দিনে এসব দাবি পেশ করা হয়।
সমাপনী অধিবেশনে অ্যাকশন-এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির বলেন, নতুন বাংলাদেশে জলবায়ু সুবিচার প্রতিষ্ঠায় তরুণরা উদ্যোগ নিয়েছে, তাদের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ তৈরি করতে হবে। বাংলাদেশ ইয়ুথ কপের দাবিসমূহ জাতীয় পর্যায়ের পাশাপাশি আগামী আজারবাইজানে অনুষ্ঠিতব্য কপ-২৯ এর নীতিনির্ধারকদের কাছে পৌঁছাতে হবে। আমি বিশ্বাস করি ‘বাংলাদেশ ইয়ুথ কপ’ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং জাতীয় পর্যায়ের নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে।
তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধি জান্নাতুল নাঈম বলেন, বাংলাদেশের একেবারে প্রান্তিক এলাকার মানুষজন বৈশ্বিক জলবায়ু সংকটের শিকার হচ্ছেন। দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে দেশের প্রান্তিক এলাকার প্রায় আট শতাধিক জলবায়ু আন্দোলনকারীর কষ্টের কথা আমরা শুনেছি মাসখানেক ধরে। আমরা সমাধান চাই। যাতে জলবায়ু সংকটে বিপদাপন্ন এলাকা ও মানুষদের জলবায়ু ন্যায়বিচার সুনিশ্চিত হয়।

জলবায়ুবিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যা কোনো বিচ্ছিন্ন সমস্যা নয়। দেশে আইন আছে। প্রত্যেক সমস্যার সমাধান কতটুকু স্থানীয় পর্যায়ে বাস্তবায়নযোগ্য সেটা বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তরুণদের নেতৃত্বে স্থানীয় পর্যায়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা করতে হবে। একই সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের যে মানদণ্ড তা হতে হবে জেন্ডার ও যুব সংবেদনশীল।
অস্ট্রেলিয়া হাইকমিশনের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার নার্দিয়া সিম্পসন বলেন, জলবায়ু সংকট নিরসনে ধারাবাহিকভাবে আওয়াজ তুলে যেতে হবে। একই সঙ্গে তরুণদের একতাবদ্ধ হয়ে জলবায়ুর দাবিতে সমবেত হয়ে সবাইকে সচেতন করতে হবে। যারা জলবায়ু সংকটকে স্বীকৃতি দেয় না তাদের বারবার জানাতে হবে পলিসি অ্যাডভোকেসির মাধ্যমে। আরও বড় পর্যায়ে এই প্রচেষ্টা নিয়ে যেতে হবে।
তরুণদের দাবিগুলো হলো
১. জলবায়ু প্রভাবজনিত স্বাস্থ্য সমস্যা বিশেষ করে প্রান্তিক নারী ও কিশোরীদের প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সমস্যা মোকাবিলায় স্বাস্থাসেবা কার্যক্রমের পর্যাপ্ততা নিশ্চিতকরণ ও সেবাদানকারীদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ। ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ের স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম ত্বরান্বিত করা। দুর্যোগকালীন আশ্রয়কেন্দ্রভিত্তিক ও ভ্রাম্যমাণ স্বাস্থ্যসেবা চালু রাখা।২. সরকারি সেবার আওতায় সকল নাগরিকের জন্য সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা। দুর্যোগকালীন সুপেয় পানি ও খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা। উপকূলীয় অঞ্চলে টেকসই বাঁধ নির্মাণ ও পানীয় জলের সমস্যা মোকাবিলায় পুকুর খননসহ অন্যান্য উদ্যোগ গ্রহণ।৩. প্রান্তিক পর্যায়ে অভিযোজন উদ্যোগকে শক্তিশালী করা এবং যুবদের উদ্যোগে স্থানীয় পর্যায়ে অভিযোজন উদ্যোগ পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান।৪. জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় যুবদের সচেতনতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি এবং শিক্ষা কার্যক্রমে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়সমূহ গুরুত্বসহকারে উপস্থাপন করা। জলবায়ু বিবেচনায় শিক্ষা ক্যালেন্ডার পর্যালোচনা করা ও সুপারিশ বাস্তবায়ন।৫. জলবায়ু পরিবর্তনে বিবেচেনায় যুবদের কর্মসংস্থান ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা এবং এ বিষয়ে গবেষণা ও বিনিয়োগ বাড়ানো। প্রান্তিক কৃষক ও জেলেসহ পারিবারিক, ঐতিহ্যভিত্তিক পেশাজীবীদের দুর্যোগকালীন বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।৬. সবুজ অর্থনীতি ও সার্কুলার অর্থনীতি তৈরিতে যুবদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও সরকারের পক্ষ থেকে নীতি সহায়তা প্রদান করা।
৭. দুর্যোগ মোকাবিলায় সকল পর্যায়ে সবুজবেষ্টনী তৈরি করা, অবকাঠামো নির্মাণে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বিশ্লেষণ করা ও বিবেচনা করা।৮. পরিবেশের সুরক্ষা ও দূষণ মোকাবিলায় বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ। প্লাস্টিকের ব্যবহাররোধে যথাযথ আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন।৯. জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিভিন্ন সমাজিক অভিঘাত যেমন বাল্যবিবাহ, নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা ইত্যাদির ওপর প্রভাব মোকাবিলায় উদ্যোগ গ্রহণ। নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে উদ্যোগ গ্রহণ।১০. জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিভিন্ন দুর্যোগ মোকাবিলায় নারী, শিশু, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও অন্যান্য প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অসহায়ত্ব মোকাবিলায় সরকারের পক্ষ থেকে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোকে নারী শিশু ও প্রতিবন্ধীবান্ধব করে তোলা।১১. জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা অনুযায়ী যুব উদ্যোগে অভিযোজন কার্যক্রম পরিচালনা করতে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা ও বাজেট বরাদ্দ দরকার।১২. জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নীতিনির্ধারণীতে যুবদের অংশগ্রহণের সুযোগ বৃদ্ধি ও তাদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে উদ্যোগ গ্রহণ।১৩. অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলোর টেকসই পুনর্বাসন নিশ্চিত করা।১৪. দুর্যোগের সময় বিপদাপন্ন অঞ্চলগুলোতে বিকল্প যোগাযোগ মাধ্যম নিশ্চিতকরণ।
সমাপনী অধিবেশনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জাগো ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা করভি রাখসান্দ, ইউএনডিপি বাংলাদেশের প্রোগ্রাম বিশেষজ্ঞ আরিফ এম ফয়সাল, ব্র্যাকের সিনিয়র জলবায়ু অ্যানালিস্ট মোজাম্মেল হক, জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য আরিফুল ইসলাম আদিব ও মনিরা শারমিন।
আরএএস/বিএ/এএসএম

See also  Raid: Drugs worth Rs 80000 illegally stocked for sale seized at clinic
Total
0
Share
Need Help?