কুমিল্লায় নববর্ষের আকর্ষণ কাতলা মাছের মেলা

কুমিল্লার শত বছরের পুরোনো রাজগঞ্জ বাজার। সুনাম রয়েছে এই বাজারের বড় মাছের। বিশেষ করে প্রতিবছর পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে বসে কাতলা মাছের মেলা। এ বছরও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি।
সোমবার (১৪ এপ্রিল) দুপুরে কুমিল্লা নগরীর রাজগঞ্জ বাজারে গিয়ে দেখা যায়, চারদিকে শুধুই মাছ আর মাছ। মূল বাজার ছাড়িয়ে পুরোনো ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দুই পাশে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকা ছাড়িয়ে গেছে মাছের দোকান। বড় কাতলা মাছের পাশাপাশি অন্যান্য মাছের পসরা সাজিয়েও বসেছেন দোকানিরা। মেলায় মাছ কিনতে নতুন জামাইসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের ঢল নেমেছে।
বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার মেলায় কাতলা মাছের সরবরাহ বেশি। কুমিল্লা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এখানে মাছ নিয়ে আসেন শৌখিন ব্যবসায়ীরা। এবার ২০-২৫ কেজি ওজনের কাতলা মাছ মেলায় উঠেছে।

ক্রেতাদের দাবি, অন্য বছরের তুলনায় এবার রাজগঞ্জ বাজারে মাছের দাম বেশি। তবে বিক্রেতারা বলছেন, উৎপাদন খরচ বাড়ায় গত বছরের তুলনায় দাম কিছুটা বেড়েছে।
মেলায় ঘুরে দেখা গেছে, কোথাও কোথাও পানির মধ্যে রেখে জীবিত কাতলা মাছ বিক্রি করা হচ্ছে। আবার কোথাও ডালার মধ্যে মাছ লাফালাফি করছে। বড় বড় কাতলা মাছের সঙ্গে সাজানো রয়েছে অন্য প্রজাতির বড় আকারের রুই, মৃগেল ও কার্প মাছ। ২০-২৫ কেজি ওজনের কাতলা মাছ বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৮০০-১০০০ টাকা পর্যন্ত দামে। ছোট সাইজের রুই-কাতলা বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি। তবে জীবিত মাছের দাম একটু বেশি। এর মধ্যে পুকুর-দিঘিতে চাষ হওয়া মাছের চাহিদা বেশি দেখা গেছে।
মেলায় কুমিল্লা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী চাঁদপুর, নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফেনী এবং যশোর, সাতক্ষীরা, রাজশাহীসহ বিভিন্ন এলাকা থেকেও মাছ ব্যবসায়ীরা এসেছেন। কুমিল্লায় প্রচলন রয়েছে বড় মাছ কিনে স্বজনদের বাড়ি পাঠানো। তাই অনেকে মেলা থেকে বড় মাছ কিনে শ্বশুর বাড়িসহ বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজনের বাসায় পাঠান।

See also  ভারতে তুষারধস, ধাতব কন্টেইনার থেকে ৪৬ জনকে জীবিত উদ্ধার

রাজগঞ্জ বাজারের পুরোনো মাছ ব্যবসায়ী আব্দুল মালেক বলেন, ‘মেলায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অন্তত শত শত মাছ বিক্রেতা এসেছেন। এই বাজারে পহেলা বৈশাখে বড় মাছ পাওয়া যায়। এই ঐতিহ্য প্রায় শত বছরের।’
তিনি আরও বলেন, ‘মাছের আকার ও ওজন অনুযায়ী দরদাম নির্ধারিত হয়ে থাকে। এ বছর ২০ কেজি ওজনের কাতলা মাছ বিক্রি হয়েছে ৯০০ টাকা দরে। যা গতবারের তুলনায় একটু বেশি।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে মাছ নিয়ে মেলায় এসেছেন শ্যামল দাস। তিনি বলেন, ‘২০ বছর ধরে এই মেলায় বড় বড় কাতলা মাছ নিয়ে আসি। এবারও ২৫ কেজি ওজনের মাছ নিয়ে এসেছি। দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে।’

শাহ আলম নামের একজন ক্রেতা বলেন, ‘এবার রাজগঞ্জে মাছের দাম অনেক বেশি। স্বাভাবিকভাবে বাজার থেকে যেই মাছ ৫০০ টাকায় কিনি, আজ সেই মাছ আজ বিক্রি হচ্ছে ৭০০-৮০০ টাকায়। ১৫ কেজি ওজনের একটি কাতলা মাছ কিনেছি ৮০০ টাকা কেজি দরে।’
কুমিল্লা নগরীর চর্থা এলাকার বাসিন্দা নাঈম হাসান। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘মেলায় এসে মাছ কেনার আনন্দই আলাদা। ছোট থাকতে দেখতাম বাপ-দাদারা পহেলা বৈশাখে বড় মাছ কিনে আনতেন। আত্মীয়-স্বজনদের দাওয়াত দেওয়া হতো। সেই মাছ দিয়েই তাদের আপ্যায়ন করা হতো।’
জাহিদ পাটোয়ারী/এসআর/এমএস

Total
0
Share
Need Help?