বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেছেন, সরকার ও প্রশাসনের দুর্বলতা ও সিদ্ধান্তহীনতায় ফ্যাসিস্ট খুনি হাসিনা ও আওয়ামী লীগের দোসররা আস্ফালন করার সুযোগ পাচ্ছে। নির্বাচন ও বিচার প্রক্রিয়া যত বিলম্বিত হবে, গণহত্যাকারী গণশত্রু আওয়ামী লীগ ততই সুযোগ পাবে।
বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) বিকেলে ময়মনসিংহের ধোবাউড়ায় সোহাগীপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে উপজেলার দক্ষিণ মাইজপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির কর্মীসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রিন্স বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের শক্তির মধ্যে পরিকল্পিতভাবে অনৈক্য সৃষ্টি করা হচ্ছে। আওয়ামি লীগ নিষিদ্ধ হবে কী হবে না, এই বিতর্কে পতিত ফ্যাসিস্ট সুযোগ নিচ্ছে। আওয়ামি লীগ প্রশ্নে সিদ্ধান্ত ক্রিস্টাল ক্লিয়ার। আওয়ামী রাজনীতির চ্যাপ্টার ক্লোজড। গণহত্যাকারী, জনগণের ওপর নির্যাতন-নিপীড়নকারী ফ্যাসিস্ট চক্র রাজপথে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে শহীদ পরিবারের সদস্য ও আহতরাসহ জনসাধারণ তাদের বরদাশত করবে না। সেজন্য রাজপথে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী ফ্যাসিস্ট চক্রের বিরুদ্ধে প্রশাসনকেই ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রশাসনের ভেতরে আওয়ামী প্রেতাত্মা রেখে আওয়ামী ভূত তাড়ানো যাবে না।
তিনি বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিবাদের পতনের ৮ মাস পরও প্রশাসনে তাদের দোসরদের হটানো গেলো না কেন? কারা তাদের টিকিয়ে রেখেছে তা খুঁজে বের করতে হবে। এ সময় এমরান সালেহ প্রিন্স দ্রুত প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে আগামী ডিসেম্বরে নির্বাচনের লক্ষ্যে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে নানা টালবাহানা ও ষড়যন্ত্র চলছে। তারেক রহমানের নেতৃত্বে সব ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে জনগণকে ভোটার অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া হবে।
তারেক রহমান ঘোষিত জনকল্যাণে আগামী বিএনপি সরকারের কর্মপরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে প্রিন্স বলেন, রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা বাস্তবায়নের মাধ্যমে বৈষম্যহীন ও সাম্য, মানবিক রাষ্ট্র গঠন এবং ফ্যামিলি কার্ড, কৃষক কার্ড, বেকারভাতা, কর্মসংস্থান, বিনামূল্যে চিকিৎসা, কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য, জনগণের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি, শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা, ধর্ম- বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষের সমান অধিকার প্রদান, উপজাতিদের কল্যাণে পৃথক অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা করা হবে।
সবাইকে সাংগঠনিক পুনর্গঠনের পাশাপাশি জনসম্পৃক্ততা বৃদ্ধি ও ধানের শিষের প্রচারণা চালানোরও আহ্বান জানান তিনি।
উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক আযহারুল ইসলাম কাজলের সভাপতিত্বে ও সদস্যসচিব আনিসুর রহমান মানিকের সঞ্চালনায় কর্মীসমাবেশে উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মফিজ উদ্দিন, উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মোয়াজ্জেম হোসেন লিটন, যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল হাসিম, স্থানীয় বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
কামরুজ্জামান মিন্টু/ইএ
নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের বাজারমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ এবং জনজীবনে স্বস্তি আনতে ঢাকা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে ‘জনতার বাজার’ নামে ন্যায্যমূল্যের বাজার উদ্বোধন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) বিকেলে ‘জনতার বাজার-২’ উদ্বোধন করেন ঢাকা জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তানভীর আহমেদ।
এ সময় তিনি বলেন, ঢাকা শহরে এই ধরনের বাজার করা চ্যালেঞ্জিং। দেশে যে স্থানে পণ্যের দাম কম থাকবে সেখান থেকে পণ্য এনে জনতার বাজারে কম দামে বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছি। এখন আলাদা কোনো দোকান হবে না। শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) থেকে বিক্রি শুরু হবে। বাজারের দামের চেয়ে উল্লেখযোগ্য কম দামে বিক্রি করা হবে।
তিনি আরও বলেন, এখানে কোনো পাইকারি বিক্রি হবে না, খুচরা বিক্রি করা হবে। ভোক্তা নিদিষ্ট পরিমাণ পণ্য নিতে পারবেন। ঢাকা শহরে ৬ থেকে ৭টি জনতার বাজার করার পরিকল্পনা রয়েছে।
এ সময় স্থানীয় সরকার (উপপরিচালক) মুহাম্মদ শওকত আলী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (উন্নয়ন ও মানবসম্পদ) শামীম হুসাইন, ড. শাফায়েত আহমেদ সিদ্দিকি, লালবাগ জোনের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শরীফুল হক,কামরাঙ্গীরচর থানার (ভারপ্রাপ্ত) কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আয়োজকরা জানান, নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বমুখী দাম রোধ এবং ন্যায্যমূল্যে খাদ্যপণ্য rateবিক্রয়ের জন্য এই বাজারের যাত্রা। এর আগে মোহাম্মদপুর উদ্বোধন করা হয়েছে, আজ কামরাঙ্গীরচরে ‘জনতার বাজার-২’ নামে আরেকটি বাজার চালু করা হলো। দুই বাজারে চাল, ডাল, ডিম, আলু, পেঁয়াজ, শাক-সবজি, মাছ ও মাংস বিক্রি করা হবে। পাশাপাশি মজুত ব্যবস্থাপনা ও রিয়েল টাইম মূল্যের তথ্য প্রদর্শনের জন্য একটি আধুনিক সফটওয়্যার চালু করা হবে।
তারা আরও জানান, বাজার দুটিতে ভালো সাড়া পাওয়া গেলে ঢাকার বাড্ডার বড় বেরাইদ বাজার, গুলশানের ঢেলনা মসজিদ মাঠ এবং ডেমরার সারুলিয়া বাজার এলাকাতেও এ ধরনের বাজার চালু করা হবে। এই বাজারে পাইকারি ভিত্তিতে কোনো পণ্য বিক্রয় করা হবে না। সাধারণ ক্রেতারা দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য ক্রয় করতে পারবেন।
এমআইএন/ইএ
সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও অধ্যাদেশে সিএজির জন্য রাজস্ব নিরূপণ ও আদায় নিরীক্ষার সুযোগ না রাখা করফাঁকি ও দুর্নীতির সহায়ক বলে মন্তব্য করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) এক বিবৃতিতে এ কথা জানায় টিআইবি।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের আপত্তি ও সুনির্দিষ্ট সুপারিশ থাকা সত্ত্বেও ‘সরকারি হিসাব নিরীক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫’ এ এমন কিছু বিধান রাখা হয়েছে, যা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান মহা হিসাব নিরীক্ষককে (সিএজি) সরকারের নিয়ন্ত্রণমুক্ত থেকে স্বাধীনভাবে তার কার্যসম্পাদনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ ‘সরকারি হিসাব নিরীক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫’ নীতিগতভাবে অনুমোদন করেছে।
টিআইবি বিবৃতিতে জানায়, সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও অধ্যাদেশে সিএজির জন্য রাজস্ব নিরূপণ ও আদায় নিরীক্ষার সুযোগ না রাখা; যে কোনো আঞ্চলিক, আন্তর্জাতিক ও বিদেশি সংস্থার সঙ্গে চুক্তি সম্পাদনের ক্ষেত্রে সরকারের পূর্বানুমতির বিধান এবং বিধি প্রণয়নের ক্ষেত্রে সরকারের অনুমোদন নেওয়ার বাধ্যবাধকতার বিধান রাখা হয়েছে। যা স্বার্থান্বেষী মহলের প্রভাবদুষ্ট ও অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য বিব্রতকর বলে মন্তব্য করেছে টিআইবি।
বিবৃতিতে অধ্যাদেশে এ ধরনের মৌলিক দুর্বলতা বহাল রাখা সিএজি’র সাংবিধানিক মর্যাদাকে অবজ্ঞা ও প্রতিষ্ঠানটির মৌলিক স্বাধীনতা নিশ্চিতে অনীহার সুস্পষ্ট বহিঃপ্রকাশ উল্লেখ টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, অধ্যাদেশের ৭ ধারায় রাজস্ব ‘নিরূপণ’ ও ‘আদায়’ নিরীক্ষার সুযোগ না রাখার ফলে সম্পূর্ণরূপে সরকারি রাজস্ব নিরূপণ ও আদায় সংক্রান্ত বিষয় জবাবদিহির বাইরে থেকে যাবে। রাজস্ব নিরূপণ ও আদায়ে অনিয়ম এবং যোগসাজশমূলক জালিয়াতি যে বাংলাদেশে করফাঁকির অন্যতম মাধ্যম, তা অন্তর্বর্তী সরকার কেন উপেক্ষা করছে, তা আমাদের বোধগম্য নয়।
তিনি বলেন, এক্ষেত্রে রাজস্ব বোর্ড ও তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট স্বার্থান্বেষী মহল দ্বারা সরকার প্রভাবিত হচ্ছে কি না, এ প্রশ্ন মোটেই অমূলক হবে না। অথচ এ বিষয়ে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট তার রায়ে মহা হিসাব নিরীক্ষকের ক্ষমতা নিশ্চিত করেছেন। এছাড়া ১৭ ধারায়, সিএজিকে চুক্তি সম্পাদনের ক্ষেত্রে সরকারের পূর্বানুমতি এবং ১৮ ধারায় বিধি প্রণয়নের ক্ষেত্রে সরকারের অনুমোদনের বাধ্যবাধকতার কথা বলা হয়েছে, যা প্রতিষ্ঠানটির সাংবিধানিক মর্যাদাকে অবজ্ঞা করার শামিল। কেননা রাষ্ট্রের অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে সরকারি কর্ম কমিশনের আইনে বিধি প্রণয়নের ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। উপরন্তু, এ জাতীয় বিধানাবলি বহাল রেখে অধ্যাদেশটি কার্যকর ঘোষণা করা হলে সরকারের আর্থিক খাতের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতে সিএজির জন্য নিয়ন্ত্রণমুক্ত স্বাধীন ভূমিকা পালন সম্ভব হবে না।
বিবৃতিতে টিআইবি আরও জানায়, ‘পাবলিক অডিট বিল-২০২৪’ এর খসড়া নিয়ে গোপনীয়তার চর্চায় টিআইবি উদ্বেগ প্রকাশ করে। পরে সংগৃহীত ‘খসড়া পাবলিক অডিট অধ্যাদেশ, ২০২৫’ এর ওপর টিআইবি উল্লিখিত ধারাসমূহসহ পাঁচটি সুনির্দিষ্ট সুপারিশ অর্থ উপদেষ্টা এবং আইন উপদেষ্টার নিকট প্রেরণ করে। উপদেষ্টারা বিষয়গুলো গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় নেবেন বলে আশা করা হয়েছিল। এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তারা এতটা অসংবেদনশীলতার পরিচয় দেবেন না বলে টিআইবি এখনো আশা করছে মর্মে মন্তব্য করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক।
এসএম/ইএ