দীর্ঘ একদলীয় শাসনে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর রাজনীতিকীকরণ হয়েছে

দীর্ঘ একদলীয় শাসনের ফলে ক্রমান্বয়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর রাজনীতিকীকরণ হয়েছে, যা দেশের সমগ্র নিরাপত্তা খাতকেও গ্রাস করেছে।
এছাড়াও নিয়োগ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ পেশাদারত্বের পরিবর্তে রাজনৈতিক আনুগত্যকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। এমনটাই উঠে এসেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার প্রতিবেদনে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর (ওএইচসিএইচআর) কর্তৃক প্রকাশিত তথ্য অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একটি রাজনৈতিক দলের টানা ১৫ বছরের শাসনের ফলে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্রমাগত রাজনীতিকীকরণ হয়েছে, যা দেশের নিরাপত্তা খাতে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।
ওএইচসিএইচআর জানিয়েছে, অনেক পুলিশ কর্মকর্তাকে পেশাদারিত্ব, সততা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে নয়, বরং আওয়ামী লীগ ও এর সমর্থিত সরকারে তাদের আনুগত্য বা সংশ্লিষ্টতার ভিত্তিতে নিয়োগ ও পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।
জেনেভা থেকে গত সপ্তাহে জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা বাংলাদেশের ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে আন্দোলনের সময় মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে ‘নিরাপত্তা খাতের রাজনীতিকীকরণ’ বিষয়ে একটি অধ্যায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডাইরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স (ডিজিএফআই), ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স (এনএসআই) এবং পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) মধ্য ও উচ্চ পর্যায়ের পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে শুধু প্রার্থীর রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নয়, তাদের আত্মীয়স্বজনের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতাও যাচাই করতো।
এতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে ডেপুটি ইন্সপেক্টর-জেনারেল (ডিআইজি) বা তার ঊর্ধ্বতন পদে নিয়োগ অনুমোদন করতেন এবং আওয়ামী লীগ অনুগত ব্যক্তিদের কৌশলগতভাবে মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখাসহ গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটগুলোর নেতৃত্বে বসানো হতো।
ওএইচসিএইচআর জানিয়েছে, বাংলাদেশে পুলিশের নিয়োগ ও পদোন্নতি ব্যবস্থাপনায় স্বাধীন প্রতিষ্ঠান না থাকার কারণে রাজনৈতিক দলীয় আনুগত্যের ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্তির প্রবণতা আগের সরকারগুলোর আমলেও ছিল।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অতীতে সামরিক অভ্যুত্থান ও অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার মাধ্যমে রাজনৈতিক অঙ্গনে ভূমিকা রেখেছে। এমনটি উল্লেখ করলেও ওএইচসিএইচআর জানায়, তবে অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর তুলনায় সেনাবাহিনী রাজনৈতিকভাবে কম প্রভাবিত।
সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা এবং ভেতরের তথ্য জানা ব্যক্তিরা ওএইচসিএইচআরকে জানিয়েছেন, সামরিক বাহিনীও দীর্ঘদিন ধরে দলীয় রাজনীতির দ্বারা প্রভাবিত হয়ে পড়েছিল। বিশেষ করে বাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ে।
রাজনৈতিক আনুগত্যের ভিত্তিতে সিনিয়র অফিসারদের পদোন্নতি দেওয়া হতো বা গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হতো বলে প্রতিবেদনটিতে জানায় ওএইচসিএইচআর। এতে আরও বলা হয়, যারা অনুগত নয় বলে বিবেচিত হতো, তাদের পদোন্নতি বঞ্চিত করা হতো, দূরবর্তী কোনো জায়গায় পোস্টিং দেওয়া হতো বা কিছু ক্ষেত্রে সেনাবাহিনী থেকে পদত্যাগে বাধ্য করা হতো।
জাতিসংঘের তদন্তকারীরা তাদের পর্যবেক্ষণে দেখেছেন, রাজনীতিকীকরণের ফলে ক্ষমতাসীন দল ও নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে একটি নেতিবাচক পারস্পরিক নির্ভরশীলতার সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। এমনকি ক্ষমতাসীন দলের প্রতিদ্বন্দ্বীদের দমন করার এবং ক্ষমতাসীন দলের সদস্যদের অপরাধে হস্তক্ষেপ না করার বিনিময়ে পুলিশ ও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা তাদের নিজেদের গুরুতর অপরাধ ও দুর্নীতির জন্য দায়মুক্তির নিশ্চয়তা পেতেন। গুরুতর অপরাধের জন্য ফৌজদারি জবাবদিহিতা বিরল ঘটনা ছিল এবং সাধারণভাবে দায়মুক্তির সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশি নাগরিক সমাজ সংগঠনগুলো ২৫৯৭টি কথিত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং ৭০৮টি গুমের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে।
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়, র্যাব এককভাবে ৮০০টিরও বেশি কথিত হত্যাকাণ্ড ও প্রায় ২২০টি গুমের ঘটনায় জড়িত ছিল। কিন্তু তাদের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে হত্যার দায়ে মাত্র একটি মামলায় সাজা হয়েছে। যেখানে ভুক্তভোগী ছিলেন আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী স্থানীয় নেতা।
নাগরিক সমাজ সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, ডিজিএফআই কর্মকর্তারা ১৭০টিরও বেশি কথিত গুমের ঘটনায় জড়িত ছিলেন। তবে কোনো ডিজিএফআই কর্মকর্তাকে এখন পর্যন্ত এসব অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি করা হয়নি।
জাতিসংঘের নির্যাতন বিরোধী কমিটি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মাধ্যমে স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য নির্যাতন ও ঘুষ আদায়ের ব্যাপক এবং নিয়মিত চর্চা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
ওএইচসিএইচআর জানিয়েছে, বাংলাদেশ ২০১৩ সালে ‘নির্যাতন ও নিরাপত্তা হেফাজতে মৃত্যু (নিষিদ্ধকরণ) আইন’ প্রণয়ন করলেও তারপর থেকে অন্তত ১০৩ জন বন্দি নির্যাতনে নিহত হয়েছেন।
সরকার এখন পর্যন্ত এই আইনের আওতায় মাত্র ২৪টি মামলা নথিভুক্ত করেছে এবং মাত্র একটিতে পুলিশ কর্মকর্তাদের হেফাজতে নির্যাতনে হত্যার জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এই দায়মুক্তির সংস্কৃতি আইন ও প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে।
এএমএ/জেআইএম read more

তিন ফাইনাল হারের যন্ত্রণা ভুলতে এখনও ‘ওষুধ সেবন’ করেন ডি মারিয়া

আর্জেন্টিনার পরপর তিনটি ফাইনাল হারের যন্ত্রণা, হতাশা ও চাপ সামলাতে এখনও ওষুধ সেবন করছেন বলে জানিয়েছেন কিংবদন্তি অ্যানহেল ডি মারিয়া।
ক্যারিয়ারের শেষ দিকে ২০২২ বিশ্বকাপ ও ২০২৪ কোপা আমেরিকা জিতলেও এর আগে তিন বছরের মধ্যে দুটি কোপা আমেরিকা ফাইনাল (২০১৫ ও ২০১৬ সালে) ও ২০১৪ সালের ফিফা বিশ্বকাপ ফাইনাল হেরেছিলেন তিনি।
সম্প্রতি আর্জেন্টিনার অনলাইন পত্রিকা ‘ইনফোবায়ে’কে একটি সাক্ষাৎকার দেন ডি মারিয়া। সেখানেই কষ্টের তীব্রতা বর্ণনা করেছেন আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড। ওই সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেছে ফুটবল-বিষয়ক ওয়েবসাইট ‘ইএসপিএন’।
ডি মারিয়া বলেন, ‘আমি ডোজ কমাতে পেরেছি। এখন অনেক ভালো বোধ করছি, তবে এটি কিছুটা আসক্তির মতো হয়ে গেছে… এসব ঘটনা মনে গেঁথে থাকে, জীবনে দাগ কেটে যায়।’
আর্জেন্টিনা দীর্ঘদিনের শিরোপাখরা কাটায় ২০২১ সালে। ব্রাজিলকে ১-০ গোলে হারিয়ে ২৮ বছর পর কোপা আমেরিকা জেতে আলবিসেলেস্তারা। ম্যাচের একমাত্র গোল করেন ডি মারিয়া। এরপর ২০২২ বিশ্বকাপ ফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে দলের হয়ে প্রথম গোলটি করেছিলেন তিনি, যা তাকে জাতীয় দলের অন্যতম নায়ক করে তুলেছিল।
ডি মারিয়া দুঃখ প্রকাশ করেছেন তার অনেক সাবেক সতীর্থের জন্য, যারা কখনও ট্রফি জয়ের আনন্দ উপভোগ করতে পারেননি।
কিংবদন্তি ফরোয়ার্ড বলেন, ‘কে মনে রাখে সেই খেলোয়াড়দের, যারা বিশ্বকাপ ফাইনালে পৌঁছেছিল কিন্তু জিততে পারেনি? অনেক কম মানুষ। এটা আমার কাছে অন্যায় মনে হয়। তাদের কথা কে বলছে? কেউ না। খুব কম মানুষ বলতে পারবে তারা কীভাবে খেলেছিল। আমি অনেকবার বলেছি, যখন আমরা বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম, যখন কোপা আমেরিকা জিতেছিলাম, আমি সবসময় বলেছি এই ট্রফিগুলো আগের প্রজন্মের জন্যও প্রাপ্য।’
৩৭ বছর বয়সেও প্রতিযোগিতামূলক ফুটবলে খেলা চালিয়ে গেলেও গত গ্রীষ্মে আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসর নেন ডি মারিয়া। তবে নিজের সিদ্ধান্তে অনুতপ্ত নন তিনি।
আর্জেন্টিনার হয়ে ১৪৫ ম্যাচে ৩১ গোল করা ডি মারিয়া বলেন, ‘আমি জাতীয় দলের সঙ্গে ১৬ বছর কাটিয়েছি, যেন এটা আমার কোনো ক্লাব। এটা কঠিন, তবে আমি মনে করি সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছি। অবশ্যই জাতীয় দলের হয়ে খেলার লোভ হয়। আমি যা চেয়েছিলাম সব অর্জন করেছি। আমি সেভাবেই বিদায় নিয়েছি, যেভাবে নিতে চেয়েছিলাম… আশা করি, একদিন আবার ফিরতে পারবো, ভিন্ন কোনো ভূমিকায়।’
এমএইচ/জেআইএম read more

প্রধান চরিত্রে বাজিমাত, প্রশংসায় ভাসছেন ইরা

‘ইরা, এদিকে এসো!’ নারীকণ্ঠে ডাক আসে, ছুটে যান ইরা। পরক্ষণেই আরেকটি কণ্ঠ শোনা যায়, ‘দিলনাওয়াজের সঙ্গে ছবি তুলবো।’ তার কাছেও ছুটে যান তরুণ নৃত্যশিল্পী মুবাশশীরা কামাল ইরা। কিছুক্ষণ আগেও মঞ্চে ঘুরে ঘুরে নাচছিলেন তিনি। নাট্য শেষে মঞ্চের নিচে ঘুরে ঘুরে দর্শকদের সঙ্গে ছবি তুলতে হচ্ছে তাকে। পরিবেশনার পর তরুণ একজন শিল্পীর জন্য কতটা অনুপ্রেরণার এই মুহূর্তটা? read more

Need Help?