রাজধানীর সরকারি হাসপাতালগুলোতে দালাল চক্রের দৌরাত্ম্য কমাতে যৌথ অভিযানে নেমেছে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-২) এবং পুলিশ।
রোববার (১ জুন) বেলা ১১টার দিকে র্যাব-২ এর স্কয়াটডন লিডার নিফাজ রহমানের নেতৃত্ব সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এই অভিযান শুরু হয়।
সকালবেলা মা রান্নাঘরে দুধ গরম দিচ্ছেন। আজ বাড়িতে পায়েস হবে। কারণ আজ ছোট ভাইয়ের জন্মদিন। এই যেন বাঙালির চিরচেনা পারিবারিক দৃশ্য। একটু উৎসব, একটু স্নেহ, আর তাতে মিশে থাকা দুধের সুবাস।
বাংলা সংস্কৃতিতে দুধ কেবল একটি খাবার উপাদান নয়, এটি একধরনের আবেগ, সম্পর্ক আর চেতনার বহিঃপ্রকাশ। পায়েস থেকে প্রসাদ, নববর্ষের মিষ্টি থেকে বিয়ের দুধ-ভাত সব কিছুতেই দুধ রয়েছে কেন্দ্রে। যুগ যুগ ধরে বাঙালি পরিবারে দুধের এক বিশিষ্ট সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অবস্থান তৈরি হয়েছে।
বাঙালির যে কোনো আনন্দঘন অনুষ্ঠানে দুধের তৈরি খাবার যেন অপরিহার্য। নবজাতকের জন্মদিন মানেই পায়েস; নববর্ষ মানেই রসমালাই, দই, সন্দেশের উৎসব। ঈদে সেমাই বা ফিরনি সব কিছুর মূলে দুধ। আবার দুর্গাপূজায় মায়ের অঞ্জলিতে দেওয়া হয় দুধে গাঁথা মিষ্টি, আর প্রসাদেও থাকে ক্ষীর। ভোগে দুধের উপস্থিতি আধ্যাত্মিকতায় জুড়ে দেয় পবিত্রতার স্পর্শ।
বাঙালি বিয়েতে ‘দুধ-ভাত’ এক অদ্ভুত রীতির অংশ। নববধূ আর বরকে একসঙ্গে খেতে দেওয়া হয় দুধ-ভাত, যা প্রতীক হয়ে দাঁড়ায় নতুন জীবনের শুরুর, একসাথে পথ চলার। শুধু খাবার নয়, এই রীতিটি এক ধরনের সাংস্কৃতিক প্রতীক যা প্রেম, গ্রহণযোগ্যতা ও ঐতিহ্যের প্রতিনিধিত্ব করে।
বাংলা হিন্দু সমাজে দুধ একটি ‘পবিত্র’ উপাদান। পূজায় দুধ দিয়ে ‘অভিষেক’ করা হয়, যজ্ঞে দুধ ঢালা হয় এবং ভোগ প্রস্তুত হয় দুধ দিয়ে। মুসলিম ধর্মেও দুধকে একটি পবিত্র ও স্বাস্থ্যকর খাবার হিসেবে ধরা হয়। হাদীসে উল্লেখ আছে, দুধকে জান্নাতের পানীয় হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।
বাঙালি পরিবারে শিশুর প্রথম শক্তি আসে মায়ের বুকের দুধ থেকে। এরপর গরুর দুধ যোগ হয় পুষ্টির অংশ হিসেবে। ‘দুধ-ভাত খাওয়াও, তাহলে হালকা-পাতলা থাকবে না’ এই কথাটি বহু মা-দাদির মুখে শুনেছি। দুধ যেন কেবল শরীরের জন্য নয়, মন ও আবেগেরও প্রতীক।
‘দুধে-ভাতে থাকো’ এই দোয়া আমাদের অনেকেই করে থাকে। দুধ এখানে সুখ, শান্তি আর সমৃদ্ধির প্রতীক। আবার বাংলার গল্প, গান, ছড়া, কবিতায়ও দুধের ব্যবহার এসেছে নানাভাবে। তাইতো ভারতচন্দ্র রায়গুণাকরের পৌরাণিক মঙ্গলকাব্য অন্নদামঙ্গলে তিনি বলেছেন, ‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে-ভাতে।’
বাংলার গ্রামীণ সমাজে দুধ-ভাত কেবল খাবার নয়, বরং তা ছিল সৌহার্দ্য ও আতিথেয়তার অংশ। পুরোনো দিনে কেউ মন কষাকষি করলে কিংবা কোনো ভুল বোঝাবুঝির অবসানে, গ্রামের মানুষজন আপ্যায়নের মাধ্যমে সম্পর্ক জোড়া লাগাতো। অনেক সময় মুরব্বিরা বলতেন, ‘এসো, একসঙ্গে দুধ-ভাত খাই…মনোমালিন্য থাকুক দূরে।’ এইভাবে এক প্লেট দুধ-ভাত হয়ে উঠত সম্প্রীতির সেতুবন্ধন।
শুধু ঐতিহ্যে নয়, দুধ এখন বাণিজ্যিকভাবেও বাঙালির সংস্কৃতির অংশ। দুধ দিয়ে তৈরি হচ্ছে আইসক্রিম, কাস্টার্ড, মিল্কশেক, চকলেট। নগরজীবনে আধুনিক রেস্টুরেন্টেও গুঁড়া দুধের চা, মালাই লাচ্ছি, দুধসরা চুইমুই নানান উদ্ভাবনী পদ জায়গা করে নিচ্ছে।
দুধ নিয়ে যখন কথা হচ্ছে, রাখা ভালো আজ বিশ্ব দুগ্ধ দিবস। ২০০১ সালে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এই দিনটি ঘোষণা করে দুধের পুষ্টিগুণ, কৃষিপ্রধান অর্থনীতিতে দুধের অবদান এবং মানুষের জীবনে এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা তুলে ধরার জন্য। এ দিনটি প্রতিবছর বিশ্বের নানা দেশে পালন করা হয় নানা আয়োজনের মাধ্যমে। বাংলাদেশেও এই দিবসে আলোচনা সভা, র্যালি এবং দুধ বিতরণ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
দুধ শুধু পুষ্টির উৎস নয়, এটি একটি জাতির আবেগ, বিশ্বাস, ভালোবাসা আর সংস্কৃতির বহিঃপ্রকাশ। পায়েস থেকে প্রসাদ, দুধ-ভাত থেকে দই…দুধ বাঙালির রান্না ঘরের সঙ্গে যেমন জড়িত, তেমনি জীবনের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলোর সঙ্গেও অঙ্গাঅঙ্গিভাবে যুক্ত। সময় বদলালেও, দুধের এই সংস্কৃতি আজও বাঙালির হৃদয়ে গেঁথে রয়েছে গর্বের সঙ্গে।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের সই করা নতুন নকশা ও সিরিজের ১০০০, ৫০ ও ২০ টাকা মূল্যমানের ব্যাংক নোট রোববার (১ জুন) প্রথমবারের মতো বাজারে আসছে। প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিস থেকে এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্য অফিসগুলো থেকে এই নোটগুলো ইস্যু করা হবে।
রোববার মোট ১১ ব্যাংকের মাধ্যমে বাজারে ছাড়া হচ্ছে প্রায় ২০০ কোটি টাকা। তবে গ্রাহকরা তা হাতে পাবেন সোমবার (২ জুন) থেকে। এসব ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে- সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, ডাচ বাংলা ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, আল আরাফা ইসলামী ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক এবং ইস্টার্ন ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে এক বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক ‘বাংলাদেশের ঐতিহাসিক এবং প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপত্য’- শীর্ষক নতুন ডিজাইন ও সিরিজের সব মূল্যমানের (১০০০, ৫০০, ২০০, ১০০, ৫০, ২০, ১০, ৫ ও ২ টাকা) নতুন নোট মুদ্রণের কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের সই করা নতুন ডিজাইন ও সিরিজের ১০০০, ৫০ ও ২০ টাকা মূল্যমান ব্যাংক নোট রোববার (১ জুন) প্রথমবারের মতো বাজারে ছাড়া হবে। বর্ণিত নোটসমূহ ওই তারিখে প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিস থেকে এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্যান্য অফিস থেকে ইস্যু করা হবে।
এসব মূল্যমানের নতুন নোটের পাশাপাশি বর্তমানে প্রচলিত সব কাগুজে নোট এবং ধাতব মুদ্রাও যথারীতি চালু থাকবে। এছাড়া, মুদ্রা সংগ্রাহকদের চাহিদার বিষয়টি বিবেচনা করে নিয়মিত নোটের পাশাপাশি ১০০০, ৫০ ও ২০ টাকা মূল্যমানের নমুনা নোট (যা বিনিময়যোগ্য নয়) মুদ্রণ করা হয়েছে; যা টাকা জাদুঘর, মিরপুর থেকে নির্ধারিত মূল্যে সংগ্রহ করা যাবে।
‘বাংলাদেশের ঐতিহাসিক এবং প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপত্য’- শীর্ষক নতুন ডিজাইন ও সিরিজের ১০০০, ৫০ ও ২০ টাকা মূল্যমান ব্যাংক নোটের ডিজাইন ও নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ-
১০০০ টাকা মূল্যমানের ব্যাংক নোটের ডিজাইন:
১০০০ টাকা মূল্যমানের ব্যাংক নোটটির আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ১৬০ মি.মি.×৭০ মি.মি.। নোটটি ১০০ ভাগ কটন কাগজে মুদ্রিত এবং নোটে জলছাপ হিসেবে ‘রয়েল বেঙ্গল টাইগার এর মুখ’, ‘১০০০’ এবং ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের মনোগ্রাম’ রয়েছে। নোটটিতে বেগুনি রঙের আধিক্য রয়েছে।
নোটের সম্মুখভাগে বামপাশে জাতীয় স্মৃতিসৌধ, সাভার এর ছবি ও মাঝখানে ‘প্রতিশ্রুত বাক্য’ ও মূল্যমান (এক হাজার টাকা) মুদ্রিত রয়েছে। নোটের মাঝখানের ব্যাকগ্রাউন্ডে পাতা ও কলিসহ প্রস্ফুটিত জাতীয় ফুল শাপলার ছবি মুদ্রিত রয়েছে। এছাড়া, নোটের ওপরে বামদিকে নোটের মূল্যমান ‘১০০০’, ডানকোণে ‘১০০০’ ও নিচে ডানকোণে ‘৳১০০০’ মুদ্রিত রয়েছে। নোটের পেছনভাগের ডিজাইন হিসেবে জাতীয় সংসদ ভবন, ঢাকা এর ছবি মুদ্রিত রয়েছে। নোটের ওপরে বামকোণে মূল্যমান ‘১০০০’ ও ডানকোণে ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের মনোগ্রাম’ এবং নিচে ডানকোণ এবং বামকোণে মূল্যমান ‘১০০০’ মুদ্রিত রয়েছে। এছাড়া, নোটের ডানপাশে উলম্বভাবে ‘১০০০’ মুদ্রিত রয়েছে।
নোটটিতে মোট ১৩ ধরনের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য সংযোজন করা হয়েছে। নোটটির সম্মুখভাগে বামপাশে ৫ মি.মি. চওড়া নিরাপত্তা সুতা সংযোজন করা হয়েছে যাতে ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের মনোগ্রাম’ এবং ‘১০০০ টাকা’ খচিত রয়েছে। নোটটি নাড়াচাড়া করলে ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের মনোগ্রাম’ অংশের নিরাপত্তা সুতার রং লাল হতে সবুজ রংয়ে পরিবর্তিত হয় এবং ‘১০০০ টাকা’ অংশে একটি উজ্জ্বল রংধনু বার ওপর থেকে নিচে ওঠানামা করে।
এছাড়া, নোটের ডানদিকের কোণায় মুদ্রিত মূল্যমান ‘১০০০’ রং পরিবর্তনশীল উন্নতমানের নিরাপত্তা কালি (ওভিএমআই) দ্বারা মুদ্রিত। যাতে নোটটি নাড়াচাড়া করলে এর রং ম্যাজেন্টা থেকে সবুজ রংয়ে পরিবর্তিত হয় এবং মূল্যমানের ভেতরে কোনাকুনিভাবে মুদ্রিত ‘১০০০’ লেখাটি দৃশ্যমান হয়। পাশাপাশি, নোটের সম্মুখভাগের পাতা ও কলিসহ প্রস্ফুটিত জাতীয় ফুল শাপলা দ্বারা মুদ্রিত যা ইউভি ডিটেক্টর মেশিন দ্বারা দৃষ্টিগোচর হয়।
৫০ টাকা মূল্যমানের নোট:
৫০ টাকা মূল্যমানের ব্যাংক নোটটির আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ১৩০ মি.মি.×৬০ মি.মি.। নোটটি ১০০ ভাগ কটন কাগজে মুদ্রিত এবং নোটে জলছাপ হিসেবে ‘রয়েল বেঙ্গল টাইগার এর মুখ’, ‘৫০’ এবং ‘বাংলাদেশ ব্যাংককের মনোগ্রাম’ রয়েছে। নোটটিতে গাঢ় বাদামি রঙের আধিক্য রয়েছে।
ব্যাংক নোটটির সম্মুখভাগের বামপাশে আহসান মঞ্জিল, ঢাকা- লেখাটি উভয় পাশে মাইক্রোপ্রিন্ট হিসেবে ইংরেজিতে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং পেছনভাগের বামদিকের ওপরে ‘৫০’ ও নিচে ‘৫০’ লেখা ব্যাকগ্রাউন্ডে মাইক্রোপ্রিন্ট হিসেবে যথাক্রমে “50 TAKA’ এবং BANGLADESHBANK’ মুদ্রিত রয়েছে।
২০ টাকা মূল্যমানের নোট:
২০ টাকা মূল্যমানের ব্যাংক নোটটির আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ১২৭ মি.মি.×৬০ মি.মি.। নোটটি ১০০ ভাগ কটন কাগজে মুদ্রিত এবং নোটে জলছাপ হিসেবে ‘রয়েল বেঙ্গল টাইগার এর মুখ’, ‘২০’ এবং ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের মনোগ্রাম’ রয়েছে। নোটটিতে সবুজ রঙের আধিক্য রয়েছে।
ব্যাংক নোটটির সম্মুখভাগের বামপাশে ঐতিহাসিক স্থাপনা কান্তজিউ মন্দির, দিনাজপুরের ছবি এবং নোটের মাঝখানে ‘প্রতিশ্রুত বাক্য’ ও মূল্যমান (বিশ টাকা) মুদ্রিত রয়েছে। নোটের মাঝখানে ব্যাকগ্রাউন্ডে পাতা ও কলিসহ প্রস্ফুটিত জাতীয় ফুল শাপলা’র ছবি মুদ্রিত রয়েছে। এছাড়া, নোটের ওপরে বামদিকে মূল্যমান ‘২০’, ডানকোণে ‘২০’ ও নিচে ডানকোণে ‘৳২০’ মুদ্রিত রয়েছে।
ইএআর/এএমএ/এমএস